বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২
শিরোনাম

শেরপুরে মুষ্টির চালে নারীরা করছে দুর্গা পূজা


  রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৪ দুপুর

দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা" অর্থাৎ হে দেবী তুমি সর্বভূতে শক্তি রূপে বিরাজ করছো। এই মন্ত্রকে পুঁজি করেই শেরপুরের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া একদল নারী তাদের মুষ্টির চাল সংগ্রহ করে আয়োজন করেছে নারী শক্তিরূপের দুর্গা পুজা। 

শেরপুর জেলা শহরের পৌর এলাকার সাতানি পাড়া মহল্লায় আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। তারা সবাই দিন আনে দিন খায়। তারপরেও ওই সম্প্রদায়ের নারীরা এক জোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা আলাদাভাবে উদ্যোগ নিয়ে দুর্গাপূজা পালন করবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত বছর প্রথম “উমা সংঘ” নামে একটি ক্লাব গঠন করে ছোট পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও তারা একটু জাঁকজমক ভাবে পূজার আয়োজন করছে। ওই সংগঠনের ২৩ সদস্যদের কমিটির সবাই নারী। তারা নিজেদের মধ্যে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয় ওই মহল্লায় বসবাসরত ৪২ টি ঘর থেকে প্রতিদিন মুষ্টির চাল সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ওই চাল বিক্রি করে প্রতি মাসে প্রায় ২ শত টাকা করে সঞ্চয় করেন। এরপর বছর শেষে সঞ্চয়কৃত মোট ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তারা পূজা উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। একটি পূজা সম্পন্ন করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। তাই তারা তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং স্থানীয় ও শহরের অর্থশালী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়ে পূজার ব্যায়ভার সংগ্রহ করছেন।

ইতিমধ্যে প্রতিমা নির্মাণ ও রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে, বাকি অন্যান্য সাজসজ্জা, গেট নির্মাণ, আলোকসজ্জা এবং পূজার নানা উপকরণ সংগ্রহ করছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে পূজার কাজ শুরু হবে। উমার সংঘের নারীদের পাশাপাশি স্থানীয় পুরুষরাও তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে জানায় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এই পাড়ার তরুণ-তরুণীদের মাঝেও কেবলমাত্র নারীদের আয়োজনে পূজা আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং এটি একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। তাই এই পাড়ার তরুণ-তরুণীরাও তাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উমা সংঘের সভাপতি মুক্তি বিশ্বাস বলেন, নারীরা হচ্ছে শক্তির প্রতীক, তাই আমরা নারীশক্তি জাগরণের জন্য এবং পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য আমরা এই আয়োজন করেছি। আমরা গত বছর প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আমাদের প্রত্যেকটা পরিবার থেকে মুষ্টির চাল সংগ্রহ করি এবং তা পরবর্তীতে বিক্রি করে টাকা সঞ্চয় করি। সেই মুষ্টির চাল বিক্রির ৬০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি। যদিও দুর্গা পূজার ব্যয়ভার অনেক বেশি তারপরেও আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং পাশাপাশি আমাদের সমাজের পুরুষদেরও সহযোগিতার কারণে আমরা এবারও দুর্গাপূজার আয়োজন করেতে পেরেছি। 

উমা সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুমিতা বিশ্বাস বলেন, আমাদের পাড়ায় আদিবাসী-দলিত সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ব্রাহ্মণ ও সাহা গোত্রের মানুষ বসবাস করে। তারাও আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। তাই আমাদের আত্মবিশ্বাসটা আরো বেড়ে গেছে। এবার সফলভাবে পূজা অর্চনা শেষ করতে পারলে আগামীতেও আমরা আরো ভালোভাবে পূজা উদযাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় আদিবাসী নেতা বিদ্বান বিশ্বাস বলেন, দেবী দুর্গা হচ্ছে নারী শক্তির প্রতীক, সেই বিশ্বাস থেকেই আমাদের এই মহল্লার নারীরা উদ্যোগ নিয়েছেন তারা নিজেরাই দুর্গাপূজা আয়োজন করবে। যদিও এই মহল্লার সনাতনী সকল মানুষই হতদরিদ্র এবং দিনমজুর। তারপরেও তারা সাহস করে যে আয়োজনটা করেছে আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। কারণ আমাদের ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব এবং ব্যয়বহুল পূজা হচ্ছে দুর্গাপূজা। আমি স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি জানাচ্ছি যে, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল মানুষদের মধ্যে থেকে নারীরা যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে এদের পাশে থেকে এবং অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেয়া হয়।

শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট এর সভাপতি জিতেন্দ্র মজুমদার বলেন, উমা সংঘের পূজার আয়োজনটির বিষয়ে আমরা জেনেছি এবং সারেজমিনে দেখেছি। তাই তাদের জন্য অন্যান্য পূজা মন্ডপের বরাদ্দ একটু বেশি রেখেছি। এছাড়া আমাদের ভলেন্টিয়ার এবং প্রশাসনের মাধ্যমে তাদেরকে শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপন পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উমা সংঘ শুধু পূজার আয়োজনই নয়, নারী শক্তির আরাধনা করছে এই সংগঠনটি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত