মোহনগঞ্জে উন্মুক্ত জলাশয় লিজ দেওয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

মোঃ হাসান খান
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০১ দুপুর

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে আদালতের রায় উপেক্ষা করে জোক্কা বিল,তাজুয়া বিল,চক চকিয়া বিল, রাঙা মাটিয়া বিল-সহ ৯টি উন্মুক্ত জলাশয়ের লিজ বাতিলের দাবিতে মোহনগঞ্জ শহরের এসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের বরান্তর গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক লোক উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে এসে এ বিক্ষোভ করেন এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমেনা খাতুনকে অবগত করেন তারা। আদালতের সার্টিফাইড কপি হাতে ফেলে বিষটি দেখবেন বলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের বরান্তর গ্রামের আশপাশে থাকা জোক্কা বিল,তাজুয়া বিল,চকচকিয়া বিল, রাঙামাটিয়া বিল,ফাতেহা বিলসহ ছোট-বড় নয়টি জলাশয় রয়েছে।
বর্ষাকালে ওইসব জলাশয়গুলোতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে তারা ওইসব জলাশয়গুলোতে তারা তাদের গরুকে গোসল করানো থেকে শুরু করে বোরো জমিতে সেচের পানি দিয়ে আসছিলেন।
২০১৭ সালে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ওইসব জলাশয়গুলো তখনকার স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে খাস-কালেকশনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে ওইসব জলাশয়গুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে তখন খাস-কালেকশনের নামে ওইসব জলাশয়গুলো উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া লিজ বাতিলের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে বরান্তর গ্রামের ছাত্তার মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নেত্রকোণা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিজ্ঞ আদালত ওইসব জলাশয়গুলোর লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন।তখন থেকেই এলাকাবাসী ওইসব জলাশয়গুলো তারা পূর্বের ন্যায় ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্ত এবার ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আঙ্গুর মিয়া ও স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য আশরাফুল চৌধুরী সোহেল,সেলিম খান ও রুহুল আমিন খান নামে স্থানীয় বিএনপি নেতারা মিলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে তারা ওইসব জলাশয় গুলো উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে খাস-কালেকশনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে সেগুলো তারা দখলে নিয়ে নেন।
এর প্রতিবাদে সোমবার এলাকাবাসী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে এসে বিক্ষোভ করেন। বরান্তর গ্রামের বাচ্চু মিয়া চৌধুরী ও পল্টন মিয়া চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই আমরা গ্রামবাসী ওইসব উন্মুক্ত জলাশয়গুলো থেকে বোরো জমিতে সেচের পানি দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঙ্গুর মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা এলাকাবাসীর স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে কাজটি করেছেন তা শুধু দুঃখজনক।
ইউপি সদস্য আশরাফুল চৌধুরী জানান,জোক্কা বিল আমরা খাস-কালেকশনে নেওয়া হয়নি। আমরা জোক্কা বিলের পাশে একটি খাল আছে সেই খালটি (ইউএনও) স্যারের কাছ থেকে খাস-কালেকশনে নিয়েছি।
উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: আঙ্গুর মিয়া বলেন,এলাকার কোনো বিল বা জলাশয় খাস-কালেকশনের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি সব সময়ই এলাকাবাসীর সাথে ছিলাম এবং এখনো আমি এলাকাবাসীর সাথেই আছি। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য আশরাফ চৌধুরী সোহেল, সেলিম খান ও রুহুল আমিন খান এসব জলাশয় খাস-কালেকশনে নেওয়ার পর আমি তাদের বিরোধিতাও করেছি।
উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কায়ছার আল ইয়ার বলেন,২০১৭ সালের একটি মামলা রায়ের কপি আমার কাছে আছে। আমাকে ডিসি অফিসে ডাকানো হয়েছে। মামলার রায়ের কপি নেওয়ার জন্য। না জানার কারণে জনমনে একটি ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে । তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। জনগণ মনে করেছে তাদেরকে বিল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি ভুল বুঝাবুঝি আর কিছুই নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমেনা খাতুন বলেন, আদালতের আদেশের একটি কপি নিয়ে তারা আমার কাছে আসছিল। আমি এটার সার্টিফাইড কপি চেয়েছি।আদালতের আদেশের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে আমরা বিষয়টা দেখবো।