শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীতে বিলীন ১১ পরিবারের বসতভিটা

রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৬ দুপুর
_original_1758439946.jpg)
টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়েছে ১১ পরিবারের বসতভিটা।
বর্তমানে নিশ্চিহ্ন পরিবারগুলো সহায়সম্বল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় বুদ্ধিপ্রতিন্ধী এক বিদ্যালয়ে।
এদিকে উপজেলার মহারশি নদীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে আসা গাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ মো. ইসমাইল হোসেন (১৭) নামের এক কিশোরের লাশ উদ্ধারের পর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পরে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল ।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে মহারশি নদীর ব্রীজ সংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। একই সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাড় উপসে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারে পানি প্রবেশ করে। এতে এক মুহূর্তে ভেসে যায় অন্তত ১১টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের। পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয় ৩৪৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১০ হেক্টর সবজি খেত এবং আংশিকভাকে নিমজ্জিত হয় ৫৭৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৫ হেক্টর সবজি খেত। এক দিনেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক পরিবার।
এছাড়া উপজেলার মহারশি নদীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে আসা গাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ মো. ইসমাইল হোসেন (১৭) নামের এক কিশোর। পরে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাতটার দিকে উপজেলার খৈলকুড়া এলাকায় মহারশি নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের পাড়ে ভেসে ওঠলে, স্থানীয়রা লাশটিকে উদ্ধার করেন।
খৈলকুড়া এলাকার বিধাবা নারী রহিমা বেগম ভাঙা বাঁধের ধারে দাঁড়িয়ে তার আর্তনাদ করে বলেন, ‘আল্লাহ আমার সব কিছু নিয়ে গেছে, সব শেষ হয়ে গেছে, আমি এহন কই যামু? ফসল আবাদ নাই, ঘর নাই, মাছা বাইধি রাখার জায়গা নাই। বাপ-দাদার কষ্টের সব শেষ। গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ঘরবাড়ি। এবারও মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে পাহাড়ি ঢল। ভেসে গেছে তার দু’টি ঘর, ফসলি জমি, সামান্য আসবাব। স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে, অন্যের জমিতে চাষাবাদ আর দিনমজুরির আয়ে কোনোমতে সংসার চলতো। ঢলের পর পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই তার।’
বণিক সমিতির সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান খান বলেন, প্রত্যেক বছরই বর্ষা মৌসুমে মহারশি নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে বাজারের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও সাধারণ জনগণ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি হঠাৎ নেমে আসা বন্যায় ডুবে যায় অনেক দোকানপাট, নষ্ট হয় মালামাল। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মহারশি নদীর পাশে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, দোকানঘরের মেঝে উঁচু করা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার, বাজার এলাকায় টেকসই ড্রেন নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ঢলে ব্রিজপাড়ের এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর আবারও একই জায়গায় ভাঙন দেখা দিল। তারা বলেন আমরা বারবার বলেছি কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নেয়নি। আজ সব ভেসে গেছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, মহারশি নদীর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারীভাবে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।