রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শিরোনাম

কোরবানীর পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জরুরী


  মো: জায়েজুল ইসলাম

প্রকাশ :  ০৬ জুন ২০২৫, ০৪:৫০ দুপুর

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ উল আজহা। মুসলিম উম্মাহ ঈদ উল আজহা উদযাপনের জন্য ইতি মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। যাদের উপর কোরবানী ফরজ তারা তাদের পছন্দের পশু ক্রয় করেছেন বা করছেন। ঈদ উল আজহার দিন আল্লাহ পাকের সন্তোষ্টি লাভের আশায় এসব পশু কোরবানী দিবেন। 
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী কোরবানীর পশুর মাংস সবার খাওয়ার বিধান থাকলেও কোরবানীকৃত পশুর চামড়া বিক্রির টাকা সম্পূর্ণ গরীবের হক বলে জানানো হয়েছে। অনেক সময় চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে মাদরাসার পড়ুয়া গরীব এতিম শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়ার খরচ ও বহন করা হয়। কিন্তু এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে চামড়া কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের সদস্যরা চামড়ার প্রকৃত মূল্য দিতে চান না। তারা নানা অযুহাতে চামড়ার দাম কমিয়ে দেন। এতে যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার দাবীদার সেই গরীব শ্রেণির লোকেরা বা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর এ সকল কারসাজির কারনে বিগত সময়ে চামড়া বিক্রি না করে চামড়া মাটিতে পুতে ফেলে রাখার খবরও শোনা গেছে।

এসব দিক মাথায় রেখে বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার চামড়ার নতুন মূল্য নির্ধারন করেছেন এবং সারাদেশে চামড়া সংরক্ষনের সুবিধার্তে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করছেন। 

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। 
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে গরুর চামড়ার নতুন এ দাম ঘোষণা করেন(সুত্র প্রথম আলো)। এছাড়া তিনি আরও জানান, ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিগত দুই ঈদে কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে সিন্ডিকেটের কবলে চামড়ার মুল্য ছিলনা বলেই চলে। আর ক্রেতা না থাকায় অনেকেই চামড়া মাদরাসায় দান করে দিয়েছেন। আর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নাম মাত্র দামে এসব চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তখন গাভীর চামড়া ১০০টাকা আর ষাঁড় গরুর চামড়া ২শ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

গত বছর নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় গরু ছাগল মিলিয়ে প্রায় ১৩হাজার পশু কোরবানী হয়েছে। তার মধ্যে ষাঁড় বলদ রয়েছে প্রায় ৮ হাজারের উপরে। ধারনা করা হচ্ছে উপজেলায় এ বছর প্রায় ১৪ হাজার পশু কোরবানী করা হবে। এসব পশুর চামড়ার ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করতে জনসচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। চামড়ার মওসুমী ব্যবসায়ীরা উপজেলার যেসব পয়েন্টে চামড়া কেনা বেচা করে থাকেন সেগুলি নজরদারীর আওতায় আনতে হবে। এ সকল ফারিয়া ক্রেতারা অনেক সময় টেনারী কর্তৃপক্ষে বেঁধে দেওয়া মুল্যের কথা বলে থাকেন। সেক্ষেত্রে সার্বক্ষনিক মোবাইল টিমের মাধ্যমে হটলাইন ব্যবহার করে টেনারীগুলিকেও নজরদারীর আওতায় আনা দরকার। কোন রকম অসংগতি দেখা দিলে তাদের দু একজনকে জরিমানার আওতায় আনা যেতে পারে।

আর চামড়ার গুণগত মান ঠিক রাখতেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সতর্কতার সহিত চামড়া ছাড়াতে হবে, যাতে চামড়ার কোন ক্ষতি না হয়। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির জানান এ বছর প্রথম বারের মত চামড়া সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষনের জন্য উপজেলায় বিনামুল্যে ৪হাজার ৭শ কেজি লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উপজেলার ৪টি মাদ্রাসায় এসব লবণ সরবরাহ করা হয়েছে।    

অনেকেই বলাবলি করেন আজ থেকে ৫-৭ বছর আগে যেখানে একটি গরুর চামড়া বিক্রি হতো ২ থেকে ৩ হাজার টাকার উপরে দামে। সেখানে এখন তা ২শ থেকে থেকে ৪শ টাকায় নেমে আসে কি কারনে? তারা আরও বলেন, চামড়া জাত পণ্যের দাম তো কমে নি, বরং কয়েকগুন বেড়েছে। 

তাই এ চক্র থেকে বের হয়ে চামড়ার ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে হবে। চামড়ার ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত হলে উপকৃত হবে সমাজের দু:স্থ, অসহায়, দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। তেমনি উপকৃত হবে যারা চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে মাদ্রাসার গরীব, অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে থাকেন সেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

মো: জায়েজুল ইসলাম
সাধারণ সম্পাদক, পূর্বধলা প্রেসক্লাব
পূর্বধলা, নেত্রকোণা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত