বিদেশি ঋণ ফের ১০৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০১:০১ দুপুর
 (1)_original_1753340492.jpg)
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের দায় আবারও ১০৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঋণের পরিমাণ এই সীমা ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বর মাসে সামান্য কমলেও চলতি বছরের মার্চে আবারও ঋণের বোঝা ১০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের প্রতিশ্রুত ঋণ আসছে।
কিন্তু ঋণের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি যথাযথভাবে ব্যয় নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে।
সরকার প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে। তবে বিগত ১৫ বছর ধরে উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।
পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসায় বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পাশাপাশি দুর্নীতি, অর্থপাচার ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মার্চে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের প্রতিশ্রুত ঋণ পরিশোধের অংশ। এসব ঋণ নির্ধারিত খাতে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তা ব্যবহার করছে।
সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করে অন্তর্বর্তী সরকার, যার মধ্যে সরকারের সরাসরি দায় ছিল প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও পায়রা বন্দরের কয়লা আমদানির বিপরীতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কোনো চাপ পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগের সরকারের সময় ডলার সংকট চরমে পৌঁছালে তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ঋণ পরিশোধের সময় বারবার বাড়িয়ে দেন। তখন রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করে দায় মেটানো হতো। ফলে দেশের রিজার্ভ ভয়াবহভাবে কমে যায়।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ডলার সরবরাহের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ে। ফলে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেও রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার কার্যকর করায় ডলারের দাম কমতে শুরু করে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতির হারেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ৬.৯২ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়। বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরও নিট ২.৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে জমা হয়। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১.৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।