পান চাষী, লবণ চাষী ও জেলেদের অধিকার রক্ষায় পেকুয়ায় জনসমাবেশ

আবুল আরশাদ
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ দুপুর
_original_1758448245.jpg)
পান চাষী, লবণ চাষী ও জেলেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং লবণ শিল্পের সংকট মোকাবেলার দাবিতে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষা আমরা (ধরা) এবং লবণ, মৎস্য ও কৃষি কল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার বিকাল ৩টায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পান চাষী, লবণ চাষী, জেলে, স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই সমাবেশে অংশ নেয়। এই সমাবেশটি কেবল পেকুয়াবাসীর জন্য নয়, বরং দেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
লবণ, মৎস্য ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধরিত্রী রক্ষা আমরা (ধরা)’র কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল। তিনি বলেন, “স্থানীয় মানুষ তাদের নিয়ে করা যেকোন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যুক্ত থাকবে, এই আকাংখা থেকেই ৭১, ৯০ এবং ২৪ হয়। কিন্তু তার বাস্তবায়ন কেউ করে না। লবনকে কৃষিপণ্য স্বীকৃতি দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে। লবণের দাম, লবণের মাঠ ও ব্যবস্থাপণা লবণ চাষীদের সাথে কথা বলে করতে হবে”।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধরা’র সিলেট শাখার সদস্য সচিব আব্দুর করিম কিম, বরগুনা শাখার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ, হাওর রক্ষায় আমরা-এর সমন্বয়ক তোফাজ্জল সোহেল, এবং সুন্দরবন রক্ষায় আমরা-এর সমন্বয়ক নূর আলম শেখ। তারা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার সংকটের সাথে লবণ চাষীদের দুর্দশার তুলনা করে জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চুনতি রক্ষায় আমরা-এর সমন্বয়ক সানজিদা রহমান, ধরা মৌলভীবাজার এর সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সোহেল, ধরা কক্সবাজার জেলার সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম শাহিন, ধরা চকরিয়া উপজেলা আহবায়ক একেএম বেলাল হোসাইন, কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, কক্সবাজার লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এবং পেকুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ছফওয়ানুল করিম, উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মজিবুল হক চৌধুরী এবং নারী নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জিনু, রাজাখালী এয়ার আলী খাঁন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এম জাফর, জাকের হোসেন, লবণ চাষি প্রতিনিধি নুরুজ্জামান মনজু, আবদুল হালিম, আবদুল জব্বার, নেজাম উদ্দিন প্রমূখ।
সমাবেশের প্রেক্ষাপট এবং মূল দাবি-
বাংলাদেশের লবণ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি লবণ আমদানি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রান্তিক লবন চাষীরা মারাত্মক সংকটের মুখে পড়েছে। কক্সবাজারে প্রায় ৫৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়, যাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ২২ লাখ মানুষ জড়িত। কিন্তু বিদেশি লবণ আমদানির ফলে বাজারে স্থানীয় লবনের মূল্য কমে যাচ্ছে এবং চাষিরা প্রতি মণে গড়ে ৩২৮ টাকা করে লোকসানে পড়ছেন। একদিকে জমির উচ্চ খাজনা, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সমাবেশে লবণকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা, লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, লবণ মাঠের সুরক্ষা, সিন্ডেকেটমুক্ত বাজার, বিদেশি লবণ আমদানি বন্ধ, পান, লবণ ও মৎস্য’র সাথে জড়িতদের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে সরকারি ঋণ ও প্রণোদনা প্রদান করাসহ ১৫ দফার দাবি উপস্থাপন করা হয়।
সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। তারা ঘোষণা করেন, যদি সরকার তাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে না নেয়, তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। এই জনসমাবেশটি কেবল একটি প্রতিবাদ নয় বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সংহতির প্রতীক। এই আন্দোলন ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য পরিবেশ ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে এক হয়ে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।