অস্থির নেপাল ও বাংলাদেশের উদ্বেগ

এ কে এম আজিজুর রহমান
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৫ বিকাল
_original_1757748225.jpg)
নেপাল জ্বলছে। কাঠমান্ডু সহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রক্ত ঝরছে। সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে যেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, সেটিই এখন উল্টো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কি শুধুই নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা? বারবার সরকার পরিবর্তন, রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্র, কোয়ালিসান সরকার এসব কিছুই কি আভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা নাকি এটি সেই পুরনো ছক “ডিপ স্টেট”, অর্থাৎ দেশের ভেতরের এবং বাইরের শক্তির মিলিত গোপন নেটওয়ার্কের পরিকল্পিত কৌশল, যা এক দেশকে ভেঙে দিয়ে অন্য শক্তির প্রভাব বিস্তারের পথ তৈরি করে? নেপাল হিমালয়ের কোলে কেবল একটি ছোট রাষ্ট্র নয়। এটি ভারত ও চিনের মাঝে অবস্থিত এক বাফার জোন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। চিন চাইছে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে বেঁধে ফেলে নেপালকে আরও টেনে নিতে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে “গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার” নামে সেখানে কর্তৃত্ব করতে। নেপালের বিষয়গুলিতে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। ভারত চায় নেপাল একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং মিত্র দেশ হিসাবে থাকুক, ভারত তার নিজস্ব নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বড় ভাই হিসেবে সক্রিয় থাকুক এবং নেপাল এটা মানুক। পরাশক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে নিজ নিজ স্বার্থে আবির্ভূত হয়।
বিশ্বজুড়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে গত এক দশক ধরে। আরব বসন্ত থেকে ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ। প্রথমে তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করা, তারপর সরকারকে দমনমূলক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া, পরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দেওয়া, আর শেষে বাইরের শক্তির “সহায়তা”র নামে হস্তক্ষেপ। নেপাল আজ সেই পরীক্ষাগার। নেপাল ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যাদের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ নেপালের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় দেশের জন্যই অপরিহার্য।
নেপালের রাজনীতিতে গত কয়েক দশক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও পুনর্গঠন ঘটেছে, যা মাঝে মাঝে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ, একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে, নেপালের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন। কেননা নেপালের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিদ্যমান , নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য, পণ্য পরিবহন এবং শক্তি খাতে সহযোগিতা রয়েছে। নেপালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
আঞ্চলিক সংযোগ ক্ষেত্রে 'বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন)' এর মতো আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে জড়িত। নেপালের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ ধরনের উদ্যোগ ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সীমান্ত-জুড়ে নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। মানবিক দিক দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। নেপালের অস্থিতিশীলতা মানুষের চলাচল ও সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রভাবিত করতে পারে। নেপালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। তাছাড়া শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং বিভিন্ন পরাশক্তিকে তাদের স্বার্থ ও এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে।