শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
শিরোনাম

দুর্নীতি, দুর্নীতির রকমফের এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয়


  জাকির আহমদ খান কামাল

প্রকাশ :  ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৬ দুপুর

দুর্নীতি আমাদের সমাজে বহু প্রচলিত এবং নীরবে নিন্দিত একটি শব্দ। পাশাপাশি এটা একটা নিপুণ শিল্পের অপকৌশলও বটে।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্নীতির ধরন যেমন:- ছাগল কান্ড, বালিশ কান্ড, পর্দা কান্ড, বিদেশে ৩৬০ বাড়ি কান্ড, সর্বোপরি ৪০০০ কোটি টাকা কিছুই না। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ডের যেসব তথ্যবিবরনী পেয়ে থাকি তার মাধ্যমে আমরা অপকৌশলের শিল্পীত রূপ জানতে পেরেছি। তবে এগুলো হলো হাই প্রোফাইল দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি চিত্র বিশেষ পরিস্থিতিতেই শুধু জনসমক্ষে আসে।

তবে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত যেখানে ৪০০ টাকার দুর্নীতি কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি বেদনাদায়ক। 

স্থানীয় প্রশাসন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তর থেকে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে।

বিশেষ করে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, খাদ্য, সমাজ সেবা, সমাজ কল্যান এসব জনবহুল দপ্তর সহ অন্যান্য সকল দপ্তরগুলোও সেবা দানে দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের এই অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। শুধু তাই নয় যথাযথ ভাবে তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতনও করা হয় না।

দুর্নীতি আজ আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের এক গভীর শেকড়ে গেঁথে বসা সংক্রামক ব্যাধি। এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করে না, বরং ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়। রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক  উন্নয়নের পথে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্নীতির রূপ অনেক বৈচিত্র্যময়। কেউ ঘুষ গ্রহণ করে, কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে, কেউ অসদাচরণ করে, আবার কেউ স্বজনপ্রীতি বা অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। 

সরকারি প্রকল্পে অতিরিক্ত বিল-ভাউচার, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভুয়া নিয়োগ, সরকারি সম্পদের অপচয়—সবই দুর্নীতির ভয়াবহ রূপ। এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ সেবা, সমাজ কল্যাণ, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রসহ প্রায় সর্বত্র তিস্তৃত।

প্রতিরোধ শব্দটা হল অপ্রতিরোধ্য। কারণ দুর্নীতি এখন সামাজিক সংক্রামিত ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এ সমাজকে দুর্বার গতিতে সংক্রামিত করে যাচ্ছে। এ ব্যধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা খুবই কঠিন। তবে যেটা করা যায় তা হলো জনসচেতনতা তৈরী। যার যার অবস্থান থেকে এবং সম্মিলিত ভাবে।

পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা, দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের চর্চা মাধ্যমে। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচন ও প্রতিবাদ করে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক দৃঢ়তা ছাড়া দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব নয়।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ অপরিহার্য।

সবশেষে বলা যায়, দুর্নীতি রোধের দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়—প্রত্যেক নাগরিকের।

বিশেষ করে আমাদের আগামী প্রজন্মকে দুর্নীতি কুফল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে এমনভাবে সচেতন করা পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে সততা ও নৈতিকতার চর্চা করে, তবে একদিন আমরা একটি স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব—এটাই সবার কাছে প্রত্যাশা।

 

জাকির আহমদ খান কামাল 
প্রধান শিক্ষক (অব:) ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত