শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
শিরোনাম

যেসব জায়গায় হজে দোয়া কবুল হয়


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ০৮ মে ২০২৫, ১১:৩৭ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত
হজের সফরে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যে স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল এসব স্থানে। হজে যেসব স্থানে দোয়া কবুল হয়, সে স্থানগুলো উল্লেখ করা হলো : কাবা দৃষ্টিগোচর হলে : মহান আল্লাহর ঘর কাবা। কাবা শরিফ দেখে দোয়া করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, পবিত্র কাবার দিকে তাকিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। হজরত ইবনে জুরাইজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) কাবা শরিফকে দেখে এই দোয়া পড়েছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি এই ঘরের সম্মান, মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি করে দিন এবং যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ ও ওমরা করে তারও সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন।’ (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার: ৯৭৯৬)
 
মুলতাজাম ও মিজাবে রহমত : দোয়া কবুলের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান মুলতাজাম। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে। কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য উত্তর পাশে হাতিমের ভেতরে মাঝখান বরাবর সোনার পরনালা হচ্ছে মিজাবে রহমত। 
 
হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে হজে ছিলাম। তিনি হাজরে আসওয়াদ ও কাবা শরিফের দরজার মাঝের দেওয়ালের কাছে দাঁড়ালেন। নিজের বুক, দুই হাত ও কপাল লাগিয়ে রাখলেন এবং বললেন, রাসুল (সা.)-কে আমি এভাবেই করতে দেখেছি। (ইবনে মাজা: ২৯৬২)
 
সাফা-মারওয়া পাহাড় ও সায়ির মধ্যবর্তী স্থান : সাফা ও মারওয়া পাহাড় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই পাহাড়ের মাঝে সায়ি করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব। উভয় পাহাড়ই দোয়া করা ও দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান। এ জায়গায় সায়িকারীরা হাজেরা (আ.)-এর অনুসরণে কিছুটা দৌড়ান। এ স্থানে দোয়া করলেও দোয়া কবুল হয়। সাফা ও মারওয়ার ওপর দাঁড়িয়ে নবীজি (সা.) দোয়া করেছেন, আরাফায় উটের ওপর বসে হাত সিনা পর্যন্ত উঠিয়ে মিসকিন যেভাবে খাবার চায় সেভাবে দীর্ঘ দোয়া ও কান্নাকাটি করেছেন, আরাফার যে জায়গায় তিনি অবস্থান করেছেন সেখানে স্থির হয়ে সূর্য হেলে গেলে নামাজ আদায় করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করেছেন। মুজদালিফার মাশআরুল হারামে ফজরের নামাজের পর আকাশ ফরসা হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ আকুতি-মিনতি ও মোনাজাতে রত থেকেছেন। (মুসলিম: ১২১৮) 
 
আরাফাতের ময়দান : হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন হয় আরাফাত ময়দানে। এখানেই তাদের তওবা কবুল হয়। আরাফার মাঠে আরাফার দিবসের মূল অবস্থান ও আমলই দোয়া। এ দিন দোয়া-মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আ.) এই দোয়াটি পড়েছিলেন, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)। হাদিসে এসেছে, উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিবসের দোয়া এবং উত্তম কথা হলো যা আমি এবং আমার আগের নবীরা বলেছেন। 
 
‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁর, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (তিরমিজি: ৩৫৮৫)
 
মুজদালিফায় দোয়া করা : মুজদালিফায় অবস্থানকালে দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৮)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজদালিফায় অবস্থানকালে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ডাকো। তোমাদের দোয়া কবুলের কিছু স্থানে আছ। তবে জেনে রেখো! মহান আল্লাহ গাফেল অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি: ৩৪৭৯)
 
কঙ্কর নিক্ষেপের পর : কঙ্কর নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে নবীজি (সা.) দীর্ঘক্ষণ দোয়া করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সঙ্গে তাকবির বলতেন। 
 
তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দোয়া করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নবীজি (সা.)-কে এরূপ করতে দেখেছি। (বুখারি: ১৭৫১) 
 
বিদায়ি তাওয়াফ শেষে : হজ পালন শেষ করে দেশে ফেরার আগে বিদায়ি তাওয়াফ করতে হবে। তাওয়াফ শেষে আপনি মুলতাজামের কাছে চলে যাবেন। মুলতাজামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে দোয়া করবেন। এটিই আপনার শেষ সুযোগ। 
 
একে কাজে লাগান। আল্লাহর কাছে যা খুশি আপনি চাইতে পারেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হাজরে আসওয়াদ ও কাবা শরিফের দরজার মাঝের দেওয়ালের কাছে দাঁড়ালেন। নিজের বুক, দুই হাত ও কপাল লাগিয়ে রাখলেন এবং বললেন, নবীজি (সা.) -কে আমি এভাবেই করতে দেখেছি।’ (ইবনে মাজা: ২৯৬২)  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত