ফুলবাড়ীয়া হাসপাতালে এই প্রথম শিশু বাচ্চার হার্নিয়া অপারেশন

রফিকুল ইসলাম মানিক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৩ রাত

গরীব অসহায় রোগীদের আস্থার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হচ্ছে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল।ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হাসানুল হোসেনের যোগদান করার পর থেকে ক্রমেই উন্নত হচ্ছে হাসপাতালের সেবার মান।
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার দানব কান্দা গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের ১১ বছর বয়সী কন্যা সন্তান সুমাইয়া বেশ কিছু দিন যাবত হার্নিয়া রোগ ও পেট ব্যাথায় ভুগছিলেন। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটে বসবাসকারী এক আত্নীয় মারফত তারা জানতে পারে যে, অত্র হাস্পাতালে নিয়মিত হার্নিয়া, এপেন্ডিসেকটমি, সিজারিয়ান সেকশন সহ বিভিন্ন অপারেশন বিনামূল্যে করা হচ্ছে। তাই তারা রোগী সহ ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাস্পাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: কৌশিক দেব এর শরণাপন্ন হয়। রোগীর লক্ষন ও রিপোর্ট বিবেচনা করে ডা: কৌশিক দেব ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা: মো: ছাইফুল মালেক এর কাছে রোগীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। ডা: মোহাম্মদ ছাইফুল মালেক রোগীর সার্বিক অবস্থা, শারীরিক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর দ্রুত সার্জারী করার পরামর্শ দেন এবং এনেস্থিসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: মো: মমিনুল ইসলাম রোগীর অপারেশন এর ফিটনেস ও ঝুকি যাচাই-বাছাই করেন। আজ অত্র হাস্পাতালে ডা: মোহাম্মদ ছাইফুল মালেক এর তত্বাবধানে ও ডা: মো: মমিনুল ইসলাম এর এনেস্থিসিয়া প্রদানে সুমাইয়ার সফল অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়।
অন্যদিকে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের মাসুদ(৩৫) ও হার্নিয়া রোগে ভুগছিলেন, সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মদ ছাইফুল মালেক এর তত্বাবধানে ও এনেস্থিসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মো : মমিনুল ইসলাম এর এনেস্থিসিয়া প্রদানের মাধ্যমে আজ তার ও সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ ঘুরে দেখা যায় সিবিসি, ক্রিয়েটিনিন, ব্লাড গ্রুপিং, ব্লাড সুগার, সহ উপজেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পরীক্ষা নিরিক্ষা চালু আছে, এমনকি আল্ট্রসনোগ্রাম, ইসিজি ও হচ্ছে নিয়মিত প্রতিদিন। এছাড়া ফুলবাড়ীয়া উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিন এর কাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও ইতিমধ্যে হাস্পাতালে এসে পৌঁছেছে।
এছাড়াও আউটডোরে চর্ম ও যৌনরোগ, নাক-কান-গলা, গাইনী, শিশু, মেডিসিন সহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন, প্রতি মাসে গড়ে এক থেকে দেড়শো রোগীর স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়, প্রয়োজনে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন করার সুব্যবস্থা রয়েছে।
জরুরি বিভাগে ফুলবাড়ীয়া উপজেলাবাসীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক এর উপস্থিতি ও ৫০ শয্যার এই হহাসপাতাল অন্ত:বিভাগে বর্তমানে ৬০ এর ও অধিক রোগী ভর্তি হয়ে সেবা নিচ্ছেন ও তাদের সেবা প্রদানে সিনিয়র স্টাফ নার্স, ওয়ার্ড বয় সহ বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্য কর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এছাড়া রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অতীতের যে কোনো সময়ের থেকে হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, টয়লেট যথেষ্ট পরিষ্কার রাখার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়।
অনেকেরই ধারণা হার্নিয়া রোগটি ঔষধ সেবনে ভালো হয়ে যায় কিন্তু হার্নিয়া নির্মূল করতে হলে অপারেশনের মাধ্যমেই করতে হয়। ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সূত্রে জানা যায় মাংসপেশির দুর্বলতা ও গঠনগত ত্রুটির জন্য যখন শরীরের অভ্যন্তরের কোনো অঙ্গের অংশ যথাস্থান থেকে বের হয়ে আসে বা বের হয়ে আসার মতো অবস্থা তৈরি করে সেটাই হার্নিয়া। তবে অনেকেই অপারেশনে রাজি হতে চান না অথবা নানা অজুহাতে অপারেশন বিলম্বিত করেন। ফলে রোগীর বিভিন্ন জটিলতা বাড়ে, সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেরি হয়।
রোগী অভিভাবক ইব্রাহিম বলেন, হার্নিয়ার কারণে আমার মেয়ের শারীরিক নানা সমস্যা হচ্ছিল । পাশের বাড়ির একজনের পরামর্শে ফুলবাড়ীয়া হাসপাতালে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ ছাইফুল মালেক ও এনেসথেসিয়া ডাঃ মোমিনুল ইসলাম আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন ও বিনামূল্যে এ অপারেশন করেছেন। ডাক্তার এবং নার্সদের সেবা ও কার্যক্রম দেখে আমি খুবই সন্তুষ্ট। বর্তমানে আমার কন্যা সুস্থ আছে।
নার্সিং কর্মকর্তা বেদনা আক্তার বলেন,আমরা সার্বক্ষণিক রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছি।রোগীর যেকোনো সমস্যার সমাধান আন্তরিকতার সাথে করার চেষ্টা করি।
কনসালটেন্ট এনিসথেসিয়া ডাঃ মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন,যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের অপারেশন করতে আমরা প্রস্তুত।
কনসালটেন্ট( সার্জারি) ডাঃ মোহাম্মদ ছাইফুল মালেক বলেন,আমরা রোগীদের হয়রানি মুক্ত সেবা প্রদানের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন বলেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে যোগদানের পর,রোগীদের নিয়মিত অপারেশনের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।দিন দিন ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই এলাকার মানুষের আস্থার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। যাদের সিজার,পিত্তথলির পাথর,হার্নিয়া, হাইড্রোসিল এবং অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের প্রয়োজন তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করতে পারেন।