বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
শিরোনাম

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য আমদানি করে?


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যা যা আমদানি হয়
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
 
তবে এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে আছে লেদারের ব্যাগ, পাটজাত পণ্য, জুতা, সাইকেল, কৃষি ও খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ইত্যাদি।
 
বাংলাদেশে কুচিয়া বা ইল তেমন জনপ্রিয় না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গত কয়েক মাসে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি ইল মাছ রপ্তানি হয়েছে।
 
আগে প্রকৃতি থেকে ধরে কুচিয়া বিদেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অনেক চাহিদার কারণে বাংলাদেশে এখন কৃত্রিমভাবে ইলের পোনা উৎপাদন করে চাষাবাদ করা হয়।
 
অন্যান্য নানা পদের মাছসহ প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি ও কাঁকড়াও রপ্তানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
 
কৃষি ও খাদ্যপণের মধ্যে রয়েছে ‒ মাখন, মধু, কুমড়া, মটরশুঁটি, বাদাম, চা, মশলা, ময়দা, ভুট্টা, সরিষা, ঔষধি উদ্ভিদ, নারিকেল, আখের চিনি, পাস্তা, আলু, টমেটো, তামাক ইত্যাদি।
 
এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম সালফেট, বোরিক এসিড, সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু, মোমবাতি, কাগজসহ অনেককিছু পাঠানো হয়।
 
বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ‒ বোতল, ফ্লাস্ক, সাইকেল, দরজা, র‍্যাক ইত্যাদিও রপ্তানি হয়।
 
এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পোশাক রপ্তানি করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিজাত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশিই হলো তৈরি পোশাক।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে, এমন একটি সরকারি সংস্থা হলো ‘ইউনাইটেড স্টেটস সেন্সাস ব্যুরো’।
 
তাদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৯০৪ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে তা কমে হয়েছে ৭৮৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরের শুরুর দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক হাজার ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যা যা আসে
 
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেই তুলনায় আমদানির পরিমাণ খুবই কম। ‘ইউনাইটেড স্টেটস সেন্সাস ব্যুরো’ বলছে, জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ২০৩ দশমিক চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে এনেছে মাত্র ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
 
এই দুই মাসের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে মোট ২৯০ দশমিক চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র জানুয়ারিতেই এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৭০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
 
২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি গবেষণা প্রকল্প হিসাবে যাত্রা শুরু করা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি’ (ওইসি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে।
 
তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পাঠিয়েছে তৈরি পোশাক। আর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি এনেছে সয়াবিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা এই সয়াবিনের মূল্য প্রায় ১০৬ মিলিয়ন ডলার।
 
এরপরই হলো‒ ৩৩ দশমিক এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের স্ক্র্যাপ লোহা বা লোহার টুকরা এবং ২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চাল।
 
ট্রেডিং ইকোনমিক্স এর তথ্য অনুযায়ী‒ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ৬৫৮ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের লোহা ও স্টিল রপ্তানি করেছে। দেশটি থেকে বাংলাদেশ আরও অনেক পণ্য আমদানি করলেও ওই বছর লোহা ও স্টিলই বেশি এনেছে।
 
এরপরের স্থানে আছে তৈলবীজ, তেলজাতীয় ফল, শস্য, বীজ ও ফল। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের এসব পণ্য কিনেছে বাংলাদেশ।
 
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। আর এর প্রধান কাঁচামাল তুলা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশে শুল্কহার শূন্য।
 
ওই বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আড়াইশো মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তুলা কিনেছে।
 
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে‒ জৈব রাসায়নিক, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, পশুখাদ্য, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক চুল্লি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, বিমান, জাহাজের কাঠামো, উড পাল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, পারফিউম, প্রসাধনী, হুইস্কি, গাড়ি, বাদাম, ডিম, মধু, সাবান, মোম, পাখির চামড়া ও পালক, মানুষের চুল ইত্যাদি।
 
এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে থেকে লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্ট, রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, তামাক, বই, খেলনা, অ্যালুমিনিয়াম, সার, কফি, বাদ্যযন্ত্র, সিরামিকের তৈরি পণ্য, জিংক, কপারসহ আরও নানা ধরনের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।
আমদানি কতটা বাড়ানো সম্ভব?
 
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানির হিসাব করলে দেখা যায় যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্যই বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যে উচ্চহারের শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
 
অন্তবর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ইতিমধ্যে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্ক কমাতে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।
 
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৯০টি পণ্যের শুল্কহার শূন্য রেখেছে। এবার আরও ১০০ পণ্যকে এই তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
 
গত মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
 
তিনি বলেছেন, ‘‘এই চিঠির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করি। আমাদের লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। এখন কী কী পণ্য দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি, সেটাই আমরা দেখছি।’’
 
কিন্তু আরও ১০০ পণ্যকে শুল্কমুক্ত করে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো আসলেই সম্ভব?
 
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, এভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব না।
 
বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ ‘‘তড়িঘড়ি করে’’ ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেটি না করে আরও কিছু অগ্রগতি দেখে ‘‘সময় নিয়ে’’ চিঠি পাঠানো যেত বলে মতামত দিয়েছেন তিনি।
 
কারণ হিসাবে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বাংলাদেশের মূল রপ্তানি পণ্য – তৈরি পোশাক, চামড়ার তৈরি জুতা, টেক্সটাইল– স্বাভাবিক শুল্কেই রাখা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, সব পণ্যেই বোধহয় শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রোডাক্ট লিস্ট দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে ওগুলোকে বাড়তি শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এই প্রোডাক্ট লিস্ট এতদিন পাওয়া যাচ্ছিলো না।’’
 
‘‘পণ্যভেদে আগে এগুলোয় ৯, ১০, ১১ শতাংশ...এরকম শুল্ক ছিল। এখনও সেটিই প্রযোজ্য হবে।’’
 
এরকম একটি প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ‘কেন একটি উন্নত দেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিবে’ এমন প্রশ্ন করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘এটি আমার বোধগম্য না।’
 
প্রচলিত বাণিজ্য কাঠামোয় উন্নত দেশগুলো শুল্ক সুবিধা দেয়। সেখানে ‘আমরা আগ বাড়িয়ে উন্নত দেশকে শুল্ক সুবিধা দিতে যাচ্ছি, তাদের আরোপিত উচ্চ শুল্কের বিনিময়ে।’
 
এই পুরো বিষয়টি বাণিজ্যনীতি ও প্রচলিত বাণিজ্য কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই, বাংলাদেশের তরফ থেকে ওইরকম প্রস্তাব দেওয়া ‘ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত